প্রশ্নঃ গ্রামীণ বসতির বিভিন্ন নিদর্শন আলোচনা কর। (Discuss various patterns of rural settlements.)
********************************************************************************************************
উত্তরঃ গ্রামীণ বসতির বিকাশ, আকার বিন্যাস এবং অভ্যন্তরীণ গঠনে প্রাকৃতিক উপাদান যেমন ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ুর উপাদান, মৃত্তিকা, বনভূমি এবং অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই উপাদানগুলির মধ্যেও আঞ্চলিক ভিন্নতা দেখতে পাওয়া যায়। এর ফলে ভূ-পৃষ্ঠের কোথাও ঘন ও কোথাও বিক্ষিপ্ত বসতির সৃষ্টি হয়েছে।
গ্রামীণ বসতির আকৃতি নির্ধারণের জন্য ঘরগুলির মধ্যেকার দূরত্ব, সংখ্যা, জনসংখ্যা এবং তার ঘনত্বকে ভিত্তি মানা হয়। এর ওপর ভিত্তি করে কোথাও স্থায়ী সংঘবদ্ধ রূপ পেয়েছে, কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে আবার কোথাও সরলরেখা বরাবর গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন উপাদানের ওপর ভিত্তি করে গ্রামীণ বসতিকে মোটামুটি চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- সংঘবদ্ধ বা গোষ্ঠীবদ্ধ বসতি (Compact or Nucleated Settlement)
- বিক্ষিপ্ত অথবা বিচ্ছিন্ন বসতি (Dispersed or Scattered Settlement)
- রৈখিক বা দণ্ডাকৃতি বসতি (Linear Settlement)
- অর্ধ-সংঘবদ্ধ বসতি (Semi Compact Settlement)
- সংঘবদ্ধ বা গোষ্ঠীবদ্ধ বসতি (Nucleated): এই ধরণের বসতিকে অনেকগুলি পরিবার একটি নির্দিষ্ট স্থানে কম ব্যবধানে গৃহ নির্মাণ করে বসতি স্থাপন করে। এই ধরনের বসতিকে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন নামে অভিহিত করেছেন। যেমন পিণ্ডাকৃতি গোষ্ঠীবদ্ধ (Nucleated) পুঞ্জীভূত (Clustered) প্রভৃতি। এই ধরণের বসতির বিকাশ উপযুক্ত স্থলে (Site) যথা ভূ-ভাগ, সুশাসিত অর্থনৈতিক ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। অর্থাৎ অধিক জনসংখ্যার ভরন পোষণের জন্য প্রাপ্ত পর্যাপ্ত সম্পদের উপলব্ধিতা এবং পারস্পরিক সহযোগীতার চেতনা থেকেই এই প্রকারের বসতি গড়ে ওঠে। এই ধরনের বসতিতে বাসিন্দারা একটি কেন্দ্রিভূত স্থানে বসতি স্থাপন করে। এই ধরনের বসতিতে মানুষ পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সংঘবদ্ধভাবে সম্প্রদায়গত সুযোগ সুবিধাগুলি ভোগ করে। এই ধরনের বসতি বিভিন্ন আকারের গৃহ দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে। গোষ্ঠীবদ্ধ বসতিতে জনসংখ্যা 500 থেকে বেশি হয়। বৃহৎ আকারের বসতিতে 5 থেকে 10 হাজার জনসংখ্যা থাকতে পারে।
ভারতে সংঘবদ্ধ বা গোষ্ঠীবদ্ধ বসতি উর্বরভূমি এবং জলবিন্দু যুক্ত মালভূমি অঞ্চলগুলি দেখতে পাওয়া যায়। এই ধরনে বসতিতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির লোক একসাথে বসবাস করে থাকে। এই ধরনের বসতি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি, ব্যবসা, বাণিজ্য বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে পরবর্তীকাল বাজার এাম (Market Village) কসবা, শহরে পরিণত হয়।
- বিক্ষিপ্ত বসতি (Dispersed): বিক্ষিপ্ত বসতি বিচ্ছিন্ন (Dispersed) এবং একত্রিত (Isolated) বসতি নামেও পরিচিত। এই ধরনের বসতিতে একটি অথবা কয়েকটি গৃহ হয়ে থাকে এবং বসতি দূরে দূরে অবস্থিত হয়। এই বসতিতে দুটি বাসগৃহের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেশি থাকে। এই বসতিতে ক্ষুদ্র পরিবার থাকে। এই বসতিতে অধিবাসীদের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা বেশি থাকে। সাধারণত সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের লোকেরা এই ধরনের অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশে বৃহৎ আকারের খামারগুলিতে এই ধরনের বসতি লক্ষ্য করা যায়।
বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে ওঠার পেছনে কতগুলি প্রাকৃতিক এবং মানবিক কারণ কাজ করে থাকে। ভারত সহ পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে বন্ধুর ভূ-প্রকৃতি অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে উঠেছে। ভারতে বিক্ষিপ্ত বসতি মূলত উপদ্বীপীয় অঞ্চল এবং হিমালয়ের গ্রাহ্য অঞ্চলে দেখা যায। হিমালয়ের পর্বতীয় ঢালে কাশ্মীর থেকে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত, পশ্চিমবঙ্গের ঝীল এবং জলাশয়ের কাছে, পূর্ববিহারে, পশ্চিম ঘাট পর্বতের পশ্চিম থেকে কেরালা পর্যন্ত এই ধরনের বসতি দেখা যায়।
- দণ্ডাকৃতি জনবসতি: অনেকসময় দেখা যায় যে, কোনো অঞ্চলের বসতিগুলি প্রায় এক সরলরেখায় অবস্থান করছে। একে দণ্ডাকৃতি জনবসতি বলে।
- বৈশিষ্ট্য (Characteristics):
এই ধরনের বসতির নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়:
(i) রৈখিক বসতিতে ঘরবাড়িগুলির পারস্পরিক ব্যবধান গ্রামীণ এলাকায় বেশি ও শহরের এলাকায় কম হয়।
(ii) অধিবাসীদের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ বেশি থাকে।
(iii) জনবসতির পার্শ্বীয় বিস্তার কম ঘটে।
(iv) পাকা রাস্তা, রেললাইন, নদী কিংবা খাল পাড়, পর্বতের পাদদেশ প্রভৃতি এলাকায় রৈখিক বসতি গড়ে ওঠে।
(v) একাধিক রৈখিক বসতির মিশ্রণের ফলে তারকা আকৃতির বসতি তৈরি হয়।
4) অর্ধ-সংঘবদ্ধ বসতি: এই ধরনের বসতি সংঘবদ্ধ এবং বিক্ষিপ্ত বসতির মধ্যবর্তী অবস্থাতে গড়ে ওঠে। যখন মানুষের মধ্যে গোষ্ঠীগত বসতির চিন্তা তীব্র হতে থাকে তখন আশে-পাশে ছোট ছোট গ্রাম বা বসবাস বিকাশ হয় যা আকারে ছোট হয়। এই রকম কসবা যুক্ত প্রধান বসতিকে অর্ধ সংঘবদ্ধ বসতি বলে। কেউ কেউ এসে মিশ্র (Composite) বসতি নামে অভিহিত করে থাকেন। এই ধরনের বসতির বিকাশ এবং বিস্তারে প্রাকৃতিক এবং মানবিক উপাদানগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ধরনের বসতি অপেক্ষাকৃত কম উপযুক্ত ভূপৃষ্ঠ; সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ, জলবিন্দুর অবস্থান এবং অপেক্ষাকৃত কম বিকশিত সামাজিক মতগঠন যুক্ত অঞ্চলে দেখা যায় এই বসতির বিস্তার বিস্তৃর্ণ অঞ্চল জুড়ে দেখা যায় বিশ্বের প্রায় সকল অঞ্চলে এই বসতি দেখা যায়। এই বসতির বিস্তার বিস্তৃর্ণ অঞ্চল জুড়ে দেখা যায়। বিশ্বের প্রায় সকল অঞ্চলে এই বসতি দেখা যায়। ভারতে প্রায় সব জায়গায় কম বেশি এই বসতি দেখা যায়।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
6295916282; 7076398606