বহির্জাত প্রক্রিয়া: নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ:

By Nitish Paul

Published on:

nth

অধ্যায়-১; বহির্জাত প্রক্রিয়া  

নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ:

  • ‘T’ ও ‘V’ আকৃতির উপত্যকা: পার্বত্য অঞ্চলে নদীতে জলপ্রবাহের বেগ বেশি হওয়ায় নিম্নক্ষয় বেশি হয়, ফলে নদী উপত্যকা দেখতে ইংরেজি অক্ষর ‘I’ এর মতো লাগে বলে। আকৃতির উপত্যকা বলে।

পার্বত্য অঞ্চলে নদীর নিম্নক্ষয়ের সাথে সাথে পার্শ্বক্ষয় হলে নদী উপত্যকা দেখতে ইংরেজি অক্ষর ‘V’ এর মতো লাগে, একে V আকৃতির উপত্যকা বলে।

  • ক্যানিয়ন: শুষ্ক অঞ্চলে I আকৃতির উপত্যকা গভীর ও সংকীর্ণ হলে তাকে ক্যানিয়ন বলে। শুষ্ক অঞ্চলে গিরিখাতকে বলে ক্যানিয়ন।
  • বৈশিষ্ট্য:
  1.  এগুলি ‘T’ আকৃতির গভীর উপত্যকা।
  2. ক্যানিয়ন শুষ্ক মরু অঞ্চলে দেখা যায়।
  3. শুষ্ক মরুপ্রায় অঞ্চলে সৃষ্টি হয় ক্যানিয়ন।
  4. এগুলি নরম শিলা গঠিত, নিম্নক্ষয় বেশি হয়।

 

  • গিরিখাত: আর্দ্র-পার্বত্য অঞ্চলে V আকৃতির গভীর উপত্যকা সৃষ্টি হলে তাকে গিরিখাত বলে।

▶ উৎপত্তি: আর্দ্র পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ঢাল বেশি হওয়াই জল দ্রুত প্রবাহিত হওয়ার ফলে নিম্ন ক্ষয়ের পাশাপাশি উপত্যকায় পার্শ্বক্ষয় করলে গিরিখাত এর উৎপত্তি হয়।

► বৈশিষ্ট্য:

  1. a) V আকৃতির গভীর উপত্যকা।
  2. b) আর্দ্র-পার্বত্য অঞ্চলে গিরিখাত দেখা যায়।
  3. c) নবীন ভঙ্গিল পর্বত অঞ্চলে সৃষ্টি হয়।
  4. d) পার্শ্ব অপেক্ষা নিম্নক্ষয় বেশি হয়ে সৃষ্টি হয়।
  • মন্থকূপ: নদীতে জলপ্রবাহের ফলে বাহিত বড় বড় পাথর খন্ড নদীর তলদেশে আঘাতের ফলে যে গর্ত সৃষ্টি হয়, তাকে মন্থকূপ বলে।

▶ উৎপত্তি: উচ্চগতিতে নদীর জলপ্রবাহের গতি অধিক হওয়াই নদীতে প্রবাহিত পাথর খণ্ডের সাথে নদীর তলদেশে আঘাতে অবঘর্ষ ক্ষয়ের ফলে নদীর তলায় মন্থকূপ সৃষ্টি হয়।

বৈশিষ্ট্য:

a) পাথরের সাথে নদীর তলদেশের ক্ষয়ে সৃষ্ট গর্ত।

b) অবঘর্ষ ক্ষয় পদ্ধতিতে মন্থকূপ সৃষ্টি হয়।

c) মন্থকূপ গুলি গোলাকার ও মসৃণ গর্ত বিশিষ্ট হয়।

d) চক্রাকারে জল এবং প্রস্তর খন্ড ঘুরতে ঘুরতে গর্ত গুলোকে আরও বড় করে তোলে।

  • কর্তিত শৈলশিরা: পার্বত্য অঞ্চলে নদীর প্রবল স্রোতের আঘাতে ক্ষয়প্রাপ্ত পর্বতের অভিক্ষেপতাংশ বা শৈলশিরা গুলিকে কর্তিত শৈলশিরা বলে।

 

  • শৃঙ্খলিত শৈলশিরা: পার্বত্য অঞ্চলে নদীর আঁকাবাঁকা গতিপথে শৈলশিরা গুলি একটি অপরটিকে আড়াল করে রাখলে সেইসব নদীর পাড় বা শৈলশিরা গুলিকে শৃঙ্খলিত শৈলশিরা বলে।

* নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে অসংখ্য গিরিখাত দেখা যায় কেন?

 

1) নবীন ভঙ্গিল পর্বত নরম শিলা দ্বারা গঠিত।

2) নবীন ভঙ্গিল পর্বত গুলি সুউচ্চ হয়।

3) নিম্নক্ষয়ের মাত্রা অনেক বেশি।

** হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অসংখ্য গিরিখাত দেখা যায়।

  • জলপ্রপাত: নদীর গতিপথে কঠিন ও নরম শিলা উপর নিচে অবস্থান করলো নরম শিলা-কঠিন শিলা অপেক্ষা দ্রুত ক্ষয় হয়ে খাড়া ঢাল সৃষ্টি করে, এই ঢাল বরাবর। নদীর জল উপর থেকে নিচে পড়লে তাকে জলপ্রপাত বলে।

জলপ্রপাত সৃষ্টির কারণ:

  1. কঠিন ও কোমল শিলার অবস্থান: পাশাপাশি অবস্থিত কঠিন ও কোমল শিলার উপর দিয়ে নদী প্রবাহিত হলে কোমল শিলা ক্ষয় হয়ে খাড়া ঢাল সৃষ্টি করে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। যেমন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নায়াগ্রা জলপ্রপাত এইভাবে সৃষ্টি হয়েছে।।
  2. চুতি বা ফাটল সৃষ্টি: নদীর গতিপথে হঠাৎ ফাটল বা চ্যুতির সৃষ্টি হলে খাড়া ঢাল সৃষ্টি হয়ে জলপ্রপাত গড়ে ওঠে। যেমন-আফ্রিকার জাম্বেসী নদীর ওপর জাম্বেসী জলপ্রপাত এইভাবে সৃষ্টি হয়েছে।
  3. মালভূমির প্রান্তভাগ: মালভূমির প্রান্তভাগে নদী খাড়াভাবে নেমেএসে জলপ্রপাত তৈরি করে। যেমন-বিহারের সুবর্ণরেখা নদীর উপর হুজু জলপ্রপাত এইভাবে সৃষ্টি হয়েছে।
  4. ঝুলন্ত উপত্যকা: হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট U আকৃতির ভাসমান উপত্যাকার মধ্যে নদী প্রবাহিত হলে, জল পর্বতের উপর থেকে নিচে পতিত হয়ে জলপ্রপাত গড়ে ওঠে।
  5. নিকবিন্দু: পুনর্যৌবন এর ফলে নিকবিন্দু সৃষ্টির পরে নদীর নতুন উপত্যকা এবং পুরনো উপত্যকার মাঝখানে খাড়া ঢালের সৃষ্টি হয়। ঢাল বরাবর নদী উপর থেকে নিচে এসে জলপ্রপাত সৃষ্টি করে। যেমন-পুনর্যৌবন লাভের ফলে নিক বিন্দুতে সৃষ্ট একটি জলপ্রপাত হল দশম জলপ্রপাত।

(৪) প্রপাত কূপ (প্লাঞ্জ পুল): জলপ্রপাতের নিচে দ্রুত গতিতে জল পড়ার ফলে জলপ্রপাতের পাদদেশে সৃষ্ট  গোলাকৃতি গর্তকে প্রপাতকূপ বলে।

a) এগুলি হল জলপ্রপাতের নিচে সৃষ্ট গর্ত।

b) জল উপর থেকে নিচে পড়ে এই গর্ত সৃষ্টি হয়।

c) গর্ত গুলি গোলাকার হাড়ির মতো দেখতে হয়।

 

  • জলপ্রপাতের তলে বড় গোলাকার বা হাঁড়ির মতো গর্ত সৃষ্টি হয় এই গর্তকে প্রপাতকূপ বলে।
 
 

জলপ্রপাত সম্পর্কিত তথ্য:

 

Ø নদীর জল উপর থেকে নিচে পড়লে-জলপ্রপাত বলে।

Ø জলপ্রপাত সাধারণত নদীর উচ্চ গতিতে সৃষ্টি হয়।

Ø হিমবাহের ঝুলন্ত উপত্যকায় জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়।

Ø পুন: যৌবনের ফলে নিক বিন্দুতে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়।

Ø জলপ্রপাতের পাদদেশে প্রপাতকূপ (প্লাঞ্জ পুল) হয়।

Ø জলপ্রপাত ক্রমশ উৎস অঞ্চলের দিকে সরে গেলে তাকে জলপ্রপাতের পশ্চাদপসরণ বলে।

 

 

 

জলপ্রপাতের শ্রেণীবিভাগ: জলপ্রপাত তিন প্রকার- (i) র‍্যাপিড (খরস্রোত): নদীর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলা পাশাপাশি উল্লম্বভাবে অবস্থান করলে কোমল শিলা দ্রুত ক্ষয় পেয়ে অসম ঢাল সৃষ্টির কারণে নদীর জলধারা যখন উঁচু থেকে ধাপে ধাপে নীচের দিকে প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়, তখন তাকে খরস্রোত বা র‍্যাপিডস বলে। যেমন-সুবর্ণরেখার হুডু জলপ্রপাত। (ii) ক্যাসকেড: জলপ্রপাত একাধিক ধাপে নেমে এলে তাকে কাসকেড বলে। এই জলপ্রপাত খুব ছোট হয়। যেমন-সুবর্ণরেখা নদীর জোনহা জলপ্রপাত। (iii) ক্যাটারাক্ট: অধিক উচ্চতা থেকে প্রবল জলধারা যখন উত্তাল গতিতে নেমে আসে তাকে ক্যাটারাক্ট বলে। ক্যাটারাক্ট হলো বিশাল বড়ো আকারের জলপ্রপাত। যেমন- সাল্টো এঞ্জেল জলপ্রপাত।

 

জলপ্রপাতের পশ্চাদপসরণ: জলপ্রপাতের নিচের নরম শিলাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পিছন দিকে এগিয়ে গেলে তাকে জলপ্রপাতের পশ্চাদপসরণ বলে।

 

জলপ্রপাতের পশ্চাদপসরণের কারণ বা জলপ্রপাত উৎসের দিকে সরে যাওয়ার কারণ:

  1. জলের দ্রুত পতনে ক্ষয়: জল উপর থেকে নিচে পড়ার ফলে কঠিনশিলা অপেক্ষা নরমশিলা দ্রুত ক্ষয় পায়।
  2. নরম শিলাতে বুদবুদ ক্ষয়: কঠিন শিলার নিচে নরম শিলা বুদবুদ ক্ষয়ের মাধ্যমে পড় শিলা শত্রু শিলা ক্রমশ পিছনে সরে যেতে থাকে ও উপরের কঠিন শিলা ঝুলে থাকে।
  3. ঝুলন্ত কঠিন শিলার অবনমন: উপরের নরম শিলা কঠিন শিলা জলস্রোতের ক্ষয় ভেঙে (i) নিচের নরম শিলা ক্ষয় (ii) ঝুলন্ত কঠিন শিলা অবনমন (iii) পশ্চাদপসরণ পড়ার ফলে জলপ্রপাতটি ক্রমশ উৎসের দিকে সরে যায় এবং পশ্চাদপসরণ ঘটে।

 

বিষয়

জলপ্রপাত

খরস্রোত।

(i) ধারণা

নদীর জল উপর থেকে নিচে পড়ে সৃষ্টি হয়।

পার্বত্য প্রবাহের অসংখ্য ছোট জলপ্রপাত।

(ii) অবস্থান

চ্যুতি, নিক-পয়েন্ট, প্রভৃতিতে সৃষ্টি হয়।

নদীর পার্বত্য প্রবাহে সর্বত্রই দেখা যায় প্রায়।

(iii) উদাহরণ

যোগ জলপ্রপাত।

আফ্রিকার জায়রে নদীর খরস্রোত।

 

জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরি করবো আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

6295916282; 7076398606