প্রশ্নঃ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজের ভূমিকা আলোচনা করো।

By Nitish Paul

Published on:

nth

প্রশ্নঃ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজের ভূমিকা আলোচনা করো।
******************************************************************************************************************************
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একজন মহান দেশপ্রেমিক ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব গ্রহণের পর ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং ‘দিল্লি চলো’ শ্লোগান তুলে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের শপথ নেন।
                                                      ◆নেতাজি সুভাসচন্দ্র বসুর ভূমিকা: স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভূমিকা-
১. বামপন্থী রাজনীতিতে নেতৃত্বদান: সুভাষচন্দ্র বসু মাত্র ২৮ বছর বয়সে ভারতীয় রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা ও সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। এজন্য জাতীয় আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণীর ব্যাপক অংশগ্রহণে কংগ্রেসের মধ্যে যে বামপন্থী চিন্তাধারার অনুপ্রবেশ ঘটে, তাতে জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে তিনিও নেতৃত্ব প্রদান করেন।
২. ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ দল গঠন: স্বাধীনতা অর্জনের নীতির বিষয়ে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে মতপার্থক্যের ফলে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেসের সদস্যপদ ত্যাগ করেন। এরপর তিনি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ দল গঠন করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল শক্তিশালী গণ আন্দোলনের মাধ্যমে ইংরেজদের পরাজিত করে ভারতের স্বাধীনতা অর্জন করা।
৩. আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব গ্রহণ: ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ আগস্ট সুভাষচন্দ্র বসু ‘আজাদ হিন্দ বাহিনীর’ নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজকে পাঁচটি ব্রিগেডে বিভক্ত করেন এবং জাপানের হাতে বন্দি ২০ হাজার ভারতীয় সৈন্যদের এই ফৌজে যুক্ত করেন। ক্যাপ্টেন মোহন সিং ছিলেন এই ফৌজের প্রধান সেনাপতি।
৪. আজাদ হিন্দ সরকার গঠন: ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে সুভাষচন্দ্র ‘আজাদ হিন্দ সরকার’ নামে একটি অস্থায়ী স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। শীঘ্রই জাপান, জার্মানি, ইতালিসহ নয়টি দেশ এই সরকারকে স্বীকৃতি জানায়। জাপান সরকার তাঁর অধিকৃত ‘আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ’ আজাদ হিন্দ সরকারকে অর্পন করেন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২৩ অক্টোবর ‘আজাদ হিন্দ সরকার’ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
৫. জাপানের সহায়তা লাভ: ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জুন সুভাষচন্দ্র সাবমেরিনে করে জার্মানি থেকে জাপানের রাজধানী টোকিওতে পৌঁছান। জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজো তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানান এবং জাপানি পার্লামেন্ট ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভারতীয় মুক্তি সংগ্রামকে সর্বতভাবে সাহায্যের নীতি ঘোষণা করে।
                           ◆ আজাদ হিন্দ ফৌজের ভূমিকা:  স্বাধীনতা সংগ্রামে আজাদ হিন্দ বাহিনীর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।
১. স্বাধীনতার প্রসঙ্গ আন্তর্জাতিক স্তরে উত্থাপন: ভারতের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ আজাদ হিন্দ বাহিনীর জন্যই আন্তর্জাতিক স্তরে উত্থাপিত হয়। দীর্ঘকাল যাবৎ ভারতের স্বাধীনতাকে অবদমিত করে রেখে ব্রিটিশ সরকার যে অন্যায় করে এসেছে, এই সত্য বিশ্ববাসীর কাছে উন্মোচিত করার কৃতিত্ব আজাদ হিন্দ বাহিনীর প্রাপ্য।
২. নৌবাহিনীতে প্রভাব: আজাদ হিন্দ সেনাদের চরম আত্মত্যাগ ও বীরত্বপূর্ণ লড়াই ভারতীয় নৌসেনাদের মনে বিদ্রোহী মনোভাব জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে। যার পরিণামে নৌবিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
৩. সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব গঠন: জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল স্তরের জনগণ আজাদ হিন্দ সরকার গঠনে সহযোগিতা করে এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তাদের এই লড়াই আপামর ভারতবাসীর মনে একতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব গঠনে সহায়তা করে।
৪. পরাধীনতার শৃঙ্খলমোচনে অবদান: আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে যে মুক্তি সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়, তা ভারতের পরাধীনতার শৃঙ্খলমোচনে অবদান রেখেছে। আজাদ হিন্দ সেনাদের এই মুক্তি সংগ্রাম ভারতীয়দের স্বাধীনতা অর্জনে উদ্বুদ্ধ করে।

জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
6295916282; 7076398606