Q: What do you mean by village? Identify the important features of village society.
প্রশ্নঃ গ্রাম বলতে কী বোঝো? গ্রাম্য সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি চিহ্নিত করো।
*************************************************
গ্রামের সংজ্ঞাঃ গ্রাম বা গ্রাম সমাজই হল মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশের প্রাথমিক পর্যায়। মানবসমাজের ইতিহাস যে সময় শুরু হয়েছে গ্রাম সমাজের জয়যাত্রাও ঠিক সেই সময়ে। মানুষ মূলত খাদ্য আহরণ ও নিরাপত্তার স্বার্থে সংঘবদ্ধভাবে জীবনযাপন করেছিল। এই সময়ে পারস্পরিক সহযোগিতা ও নির্ভরশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি পরিবারকে নিয়ে গড়ে উঠত একেকটি অস্থায়ী বসতি অঞ্চল। এগুলি ছিল আদিম জনসম্প্রদায়। কিন্তু এরা ছিল মূলত যাযাবর। এই যাযাবর জীবনের পরে মানুষ যখন স্থায়ীভাবে কৃষিকাজ আরম্ভ করল ঠিক তখনই সৃষ্টি হল গ্রাম সমাজের প্রাথমিক রূপ। অর্থাৎ কৃষির উৎপত্তির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ যাযাবরের মতো অস্থায়ী জীবনযাপন পরিত্যাগ করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করল। কৃষিজমি এবং ক্রমান্বয়ে ফসল উৎপাদনকে কেন্দ্র করে মানুষের যখন স্থায়ী বসতি বিন্যাস গড়ে ওঠে ঠিক তখনই গ্রামের উৎপত্তি ঘটে।
এক্ষেত্রে প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ রেবতীমোহন সরকার প্রদত্ত গ্রামের সংজ্ঞাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি তাঁর ‘সামাজিক-সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান’ গ্রন্থে গ্রামের সংজ্ঞায় বলেছেন, “কোনো ভূমিভাগে যখন কিছু সংখ্যক ঘরবাড়ি পাশাপাশি গড়ে ওঠে এবং প্রতিটি গৃহস্থের মধ্যে দৈনন্দিন জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক-অর্থনৈতিক সম্পর্ক ধারা সুসম্বদ্ধভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রগুলিকে প্রভাবিত করে তোলে তখন সেই অবিচ্ছিন্ন পরস্পর নির্ভরশীল জীবনধারাটিকে গ্রাম বলে অভিহিত করা হয়।”
গ্রাম সমাজের বৈশিষ্ট্যঃ গ্রাম সমাজের সংজ্ঞা আলোচনা করার থেকে এর বৈশিষ্ট্য দিয়ে গ্রাম সমাজকে চিহ্নিত করা সহজ। বৈশিষ্ট্যের নিরিখেই গ্রাম সমাজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করা সম্ভব। গ্রাম সমাজের আকৃতি-প্রকৃতির মধ্যেই এই বৈশিষ্ট্যগুলোর সন্ধান পাওয়া যায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলোকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করলে গ্রাম সমাজ সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ ধারণা লাভ করতে পারি। এগুলো নিম্নরূপ-
১. যৌথ পরিবার: যৌথ পরিবার ব্যবস্থা গ্রামীণ জনসম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কিছুদিন পূর্বে পর্যন্ত ভারতীয় গ্রামগুলি যৌথ পরিবার কেন্দ্রিক ছিল। বর্তমানে এর সংখ্যা কমে আসলেও যৌথ পরিবার বা একান্নবর্তী পরিবার গ্রামগুলোর একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এর অন্যতম মূল কারণ হল গ্রামীণ অর্থনীতি কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। কৃষিকাজে প্রয়োজনীয় শ্রমের সরবরাহ এই একান্নবর্তী পরিবারগুলো থেকেই পাওয়া যায়। চাষবাসের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো তাদের প্রয়োজনীয় শস্যাদি উৎপাদনে নিজেরাই কায়িকশ্রম নিয়োগ করে। এখনও পর্যন্ত যৌথ পরিবারগুলো এই শ্রম সরবরাহ করে থাকে। তা ছাড়াও কৃষিকাজের সঙ্গে অন্যান্য অনেক আনুষঙ্গিক কাজকর্ম পরিবারের সকল সদস্য সম্পন্ন করে থাকে। যৌথ পরিবারের একজন গৃহকর্তা থাকেন, তাঁর কথামতো পরিবারের সকলে বিভিন্ন দায়দায়িত্ব বহন করেন।
২. সহজ সরলতা: ভারতীয় গ্রামীণ সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল সহজ সরলতা। গ্রামের মানুষ অত্যন্ত সহজ সরল। কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলো শহুরে সমাজের বা শিল্প সমাজের জটিলতা থেকে মুক্ত। তাদের জীবনযাত্রা অত্যন্ত সহজ সরল। এখনও বলতে গেলে জীবনের ন্যূনতম ভরণপোষণে গ্রামের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত সন্তুষ্ট। গ্রামবাসীদের আচরণে কোনো কৃত্রিমতা বা ভনিতা নেই বললেই চলে। এদের আচার-আচরণ ও আদবকায়দা অত্যন্ত সাদাসিধে। চিরাচরিতভাবে বয়ে আসা সমাজ-সংস্কৃতিকে তারা আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। কৃত্রিমতাকে তারা পছন্দ করে না।
৩. উদার মানসিকতাসম্পন্ন: গ্রামীণ অধিবাসীরা সাধারণত উদার মানসিকতাসম্পন্ন হয়ে থাকে। ছলচাতুরিমূলক কোনো মনোভাব তাদের মধ্যে নেই বললেই চলে। পরার্থে নিজেকে উজাড় করে দিতে তাদের কোনো দ্বিধাদ্বন্দু নেই। পরোপকারিতা তাদের পরম ধর্ম বলে মনে করে। স্বার্থপরতাকে তারা ঘৃণার চোখে দেখে। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান, পালাপার্বণে তারা খুব সমানভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে এবং উপভোগ করে। শহুরে সমাজের ঘৃণ্য মানসিকতা থেকে তারা মুক্ত। কোনো প্রতিবেশী আপদ বিপদের সম্মুখীন হলে তারা পরম বন্ধুর বা আত্মীয়র ভূমিকা পালন করে।
৪. ধর্মীয় মনোভাব: গ্রামীণ অধিবাসীরা অত্যন্ত ধর্মভীরু। সাধারণত ভারতীয় কৃষি অর্থনীতি প্রকৃতি নির্ভরশীল হওয়ায় গ্রামবাসীদের মধ্যে এই ধরনের মনোবৃত্তি গড়ে উঠেছে। ভারতীয় অর্থনীতি এখনও সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতি নির্ভরশীল। প্রকৃতির ভয়াল দৃশ্যকে এরা ভয় ও ভক্তি করে। তা ছাড়া কৃষিকাজের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পূজাপার্বণ ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান। বিভিন্ন ঋতুতে এরা প্রকৃতিকে বিভিন্নভাবে উপাসনা করে থাকে। সবকিছু মিলিয়ে নানা প্রকার ধর্মীয় অনুষ্ঠান এদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
৫. কুসংস্কারাচ্ছন্নতা: গ্রামের অধিবাসীগণ অনেকটা কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। এই কুসংস্কারাচ্ছন্নতার পিছনে রয়েছে অশিক্ষা, গ্রামীণ দরিদ্রতা এবং অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। গ্রামের মানুষ এখনও তাদের বিভিন্ন রোগব্যাধিতে ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাস করে থাকে। অত্যাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা এখনও তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। গ্রামের মানুষের মধ্যে নিরক্ষতার হার অত্যন্ত বেশি। তা ছাড়া দরিদ্রতা নিত্যসঙ্গী হওয়ায় আধুনিক ব্যয়বহুল চিকিৎসায় তারা অপরাগ। তা ছাড়া ভূত-প্রেতে বিশ্বাসী লোকের সংখ্যাও কম নেই। এই সমস্ত কারণে গ্রামের মানুষের মধ্যে এখনও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাব পরিলক্ষিত হয়।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
6295916282; 7076398606