Q: From a critical estimate of the achievements of Kanishka-I. How would you assess the political and cultural importance of the Kushana Rule in India?
প্রশ্নঃ কনিষ্ক-১-এর কৃতিত্বের সমালোচনামূলক অনুমান থেকে। ভারতে কুষাণ শাসনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর উত্তর ভারতে বিভিন্ন বিদেশি জাতি ভারতে প্রবেশ করে এবং তারা তাদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ছিল কুষাণরা। এই যুগের দেশি ও বিদেশি প্রচুর সাহিত্য উপাদান পাওয়া গেছে। দেশীয় সাহিত্যের মধ্যে পুরাণ, কলহনের ‘রাজতরঙ্গিনী’, অশ্বঘোষের ‘রুদ্ধচরিত’, নাগার্জুনের ‘মাধ্যমিক সূত্র’, বৌদ্ধগ্রন্থ ‘মহাবস্তু’ ও ‘দিব্যবদান’ উল্লেখযোগ্য। চিনা ঐতিহাসিক সু-মা- কিয়েন রচিত ‘সি-চি’, নপাকু রচিত ‘সিয়েন-হান-সু’, হিউয়েন সাং-এর বিবরণ, গ্রিক পর্যটক স্ট্রাবো, জাস্টিনের রচনা থেকেও কুষাণদের সম্বন্ধে জানা যায়। কৌশাম্বী, সারনাথে প্রাপ্ত শিলালিপি, কুষাণ রাজাদের মুদ্রা, স্তূপ, চৈত্য, মূর্তি প্রভৃতি কনিষ্কের রাজত্বকাল তথা কুষাণ যুগের উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক উপাদান।
- কনিষ্কের সিংহাসন আরোহণ:
কুজল কদফিসিস ও বিম কদফিসিস ইউ-চি জাতির সকল শাখাকে ঐক্যবদ্ধ করে মধ্য এশিয়ায় এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তাঁরা আনুমানিক 75 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। বিম কদফিসিসের পর প্রথম কনিষ্ক কুষাণ সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন। তিনিই ছিলেন এই বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা। তবে তাঁর সিংহাসনে আরোহণের তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে।
(i) ড. ফ্লিট, ক্যানিংহাম প্রমুখ মনে করেন 58 খ্রিস্টাব্দে কনিষ্ক সিংহাসনে বসেন এবং তিনি ‘বিক্রম সম্বৎ’ প্রবর্তন করেন। (ii) মার্শাল, স্মিথ মনে করেন, 125-128 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি সিংহাসনে বসেন। (iii) ড. ভাণ্ডারকর এ সম্পর্কে 278 খ্রিস্টাব্দকে চিহ্নিত করেন, কিন্তু (iv) ফার্গুসন, টমাস, র্যাপসন প্রমুখ ঐতিহাসিকদের মতে কনিষ্ক 78 খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন এবং ‘শকাব্দ’ নামে একটি অব্দ প্রবর্তন করেন।
- রাজনৈতিক কৃতিত্ব:
কনিষ্কের সিংহাসনারোহণের সময় আফগানিস্তান, সিন্ধুর এক বিরাট অংশ পাঞ্জাবের পার্থিয়া এবং ব্যাকট্রিয়ার কিছু অংশ কুষাণ সাম্রাজ্য ছিল। কনিষ্ক এই সাম্রাজ্যকে আরও বিস্তৃত করেন। শিলালিপি, মুদ্রা ও বিভিন্ন সাহিত্য থেকে তাঁর রাজ্যজয় সম্বন্ধে ধারণা করা যায়। কলহন-এর ‘রাজতরঙ্গিনী’ থেকে জানা যায় যে, কাশ্মীর তাঁর সাম্রায্যভুক্ত ছিল। কাশ্মীরে তিনি বহু সৌধ ও কনিষ্কপুর নামক শহর প্রতিষ্ঠা করেন বারাণসীতে তাঁর শিলালিপি পাওয়া গেছে। সৌরাষ্ট্র ও মালবে রাজত্বকারী শক-রাজা নহপান তাঁর আনুগত্য মেনে নেন। সাঁচি ও মথুরা তাঁর সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। হিউয়েন সাঙ-এর রচনা থেকে গান্ধার, পুরুষপুর প্রভৃতি অঞ্চলের ওপর তাঁর আধিপত্যের কথা জানা যায়। চৈনিক ও তিব্বতীয় উপাদান থেকে জানা যায় যে, তিনি পূর্ব ভারত, অযোধ্যা ও পাটলিপুত্র জয় করেছিলেন। সম্ভবত মগধ সাম্রাজ্যের গাজিপুর ও গোরক্ষপুর পর্যন্ত কনিষ্কের রাজ্য বিস্তৃত ছিল। অলবিরুনি আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন স্থানের ওপর তাঁর আধিপত্যের কথা বলেছেন। অনেকের মতে, চিনের সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভ করে তিনি মধ্য এশিয়ার কিছু অঞ্চল অধিকার করেন।
ভারতের অভ্যন্তরে কনিষ্কের সাম্রাজ্য উত্তরে কাশ্মীর থেকে দক্ষিণে সাঁচি, পূর্বে বারাণসী থেকে পশ্চিমে সিন্ধুনদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ভারতের বাইরে কাশগড়, খোটান, ইয়ারখন্দ, কাবুল, কান্দাহার, আফগানিস্তান, বেলুচিস্তান, ব্যাকট্রিয়া তাঁর সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। পুরুষপুর বা পেশোয়ার ছিল তাঁর রাজধানী।
- সাংস্কৃতিক কৃতিত্ব:
ধর্ম: ড. হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী-র মতে, রাজ্যজয় অপেক্ষা বৌদ্ধধর্মের উৎসাহী পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কনিষ্ক স্থায়ী কীর্তির অধিকারী হয়েছেন। স্মিথ-এর মতে, বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে তিনি ‘দ্বিতীয় অশোক’-এর ভূমিকা পালন করেন। তিনি পুরোনো বৌদ্ধ মঠ, বিহার ও চৈত্যগুলি সংস্কার এবং বহু নতুন মঠ, স্তূপ ও চৈতা নির্মাণ করেন। বৌদ্ধ মঠ ও ভিক্ষুদের দানের ব্যাপারেও তিনি মুক্তহস্ত ছিলেন। রাজধানী পেশোয়ারে বুদ্ধদেবের দেহাবশেষের ওপর তিনি একটি বহুতল-বিশিষ্ট বিশাল চৈত্য ও মঠ নির্মাণ করেন। বৌদ্ধধর্মের পরস্পর-বিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠীর মতপার্থক্য দূর করে বৌদ্ধধর্মকে একটি সুসংহত রূপদান করার উদ্দেশ্যে বিখ্যাত বৌদ্ধপণ্ডিত বসুমিত্রের নেতৃত্বে তিনি কাশ্মীরে (মতান্তরে জলন্ধরে) চতুর্থ বৌদ্ধ সংগীতি বা মহাসম্মেলনের আয়োজন করেন। এই সম্মেলনে মহাযান ধর্মমতের উদ্ভব ঘটে এবং বৌদ্ধধর্মগ্রন্থগুলিকে সংস্কৃত ভাষায় অনুবাদের ব্যবস্থা করা হয়।
সাহিত্য: কনিষ্ক সাহিত্যেরও উৎসাহী পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। মৌর্যযুগে সংস্কৃত ভাষা প্রায় অবলুপ্ত হয়ে যায়; কনিষ্কের আমলে সংস্কৃত ভাষা তার হৃতগৌরব ফিরে পায়। এই যুগে প্রচুর সংস্কৃত গ্রন্থ রচিত হয় এবং বহু যুগন্ধর সাহিত্যিক, দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিকের আবির্ভাব ঘটে। বিখ্যাত কবি, দার্শনিক, সংগীতজ্ঞ অশ্বঘোষ, দার্শনিক নাগার্জুন, পণ্ডিত ও শিক্ষাগুরু বসুমিত্র ও পার্শ্ব, রাজনীতিবিদ, মাথর, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রবিদ চরক স্থপতি এজেসিলাস তাঁর রাজসভা অলংকৃত করতেন। অশ্বঘোষ রচনা করেন ‘বুদ্ধচরিত’, ‘সূত্রালঙ্কার’, ‘সৌন্দরানন্দ কাব্য’ ও ‘বজ্রসূচী’ নামক গ্রন্থ।
শিল্পকলা: স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলার ইতিহাসেও কনিষ্কের রাজত্বকাল এক নবযুগ হিসেবে চিহ্নিত। তাঁর আমলে নির্মিত মথুরা, তক্ষশীলা, পেশোয়ার প্রভৃতি অসংখ্য স্তূপ, বিহার ও চৈত্যগুলি তাঁর শিল্প-প্রীতির স্বাক্ষর বহন করে। তাঁর রাজত্বকালে মথুরা, সারনাথ, অমরাবতী ও গান্ধার-এই চারটি স্থানে চারটি শিল্পরীতির বিকাশ ঘটে। তাঁর রাজত্বকালে গ্রিক, রোমান ও ভারতীয় শিল্পরীতির সমন্বয়ে উদ্ভূত গান্ধার শিল্প উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করে।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
6295916282; 7076398606
www. gyanjyoti.info|| Nil’s Niva