প্রশ্নঃ একজন শিক্ষকের দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করো।

By Nitish Paul

Published on:

nth

Q: Discuss the Responsibilities and functions of a teacher in detail.
প্রশ্নঃ একজন শিক্ষকের দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করো।
********************************************************************
                   শিক্ষক হলেন সমাজের আলোকবর্তিকা। তিনি একদিকে জ্ঞানচর্চার নির্দেশক, মূল্যায়নকারী এবং একইসঙ্গে পরবর্তী প্রজন্ম গড়ার কারিগর।
এজন্য জন ডিউই বলেছিলেন, “জীবনের প্রস্তুতি এবং উপলব্ধির মূল কারিগর হলেন শিক্ষক”। আবার ম্যাকডুগাল -এর মতে, “অভ্যাস ও আচরণের কাঙ্ক্ষিত এবং অপেক্ষাকৃত স্থায়ী পরিবর্তনের পথপ্রদর্শক হলেন শিক্ষক”।
                প্রাচীন এবং মধ্যযুগে শিক্ষকের কাজ ছিল শিক্ষার্থীর মধ্যে জ্ঞান বিতরণ করা। কিন্তু বর্তমানকালে যুগের চাহিদা অনুসারে শিক্ষককে নানাপ্রকার বহুমুখী কর্ম সম্পাদন করতে হয়। এগুলি নীচে আলোচনা করা হল-
(i) বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা: একবিংশ শতাব্দীতে শিক্ষকের কাজ কেবলমাত্র গতানুগতিক সুনির্দিষ্ট জ্ঞানদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং শিক্ষার্থীকে জ্ঞানের নতুন নতুন ক্ষেত্র সন্ধানে এবং জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করাই শিক্ষকের প্রধান কার্য হিসেবে পরিগণিত হয়। নির্মিতিমূলক শিখনতত্ত্ব আবিষ্কারের পর শিক্ষকের দায়িত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বর্তমানে শিক্ষক কতগুলি সুনির্দিষ্ট বিষয় শিক্ষার্থীর সামনে বক্তৃতার মতো উপস্থাপন না করে নতুন বাস্তবধর্মী জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করবেন।
(ii) ব্যক্তিসত্তার সর্বাঙ্গীণ বিকাশসাধন ঘটানো: বর্তমানে শিক্ষার লক্ষ্য শুধুমাত্র জ্ঞানার্জন নয়, বরং শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ অর্থাৎ All-round development হল আধুনিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে শিক্ষকের অন্যতম কাজ হল শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ বিকাশসাধন ঘটানো। অর্থাৎ শিক্ষার্থীর দৈহিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক, নৈতিক, সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক দিকের সুষ্ঠু বিকাশ ঘটানোর জন্য শিক্ষক মহাশয়কে উপযুক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
(iii) শিক্ষার সুষ্ঠু পরিকল্পনা রচনা: পরিকল্পনা রচনাকারী হিসেবে শিক্ষকের ভূমিকা বর্তমানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে এবং বাইরে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অভিমুখী নানাবিধ কর্মসম্পাদনের জন্য এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সকল ব্যক্তিকে পালনীয় কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করার জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার। এই পরিকল্পনা রচনার গুরুদায়িত্ব শিক্ষককেই পালন করতে হয়।
(iv) পাঠক্রম নির্ধারণ: যদিও বর্তমানকালে শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে পাঠক্রম নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা রয়েছে তবুও পাঠক্রম নির্ধারণের ক্ষেত্রে শিক্ষকের দায়িত্বকে অস্বীকার করা যায় না। বিশেষত প্রাতিষ্ঠানিক এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পাঠক্রম নির্ধারণে শিক্ষকের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভূমিকা থাকে।
(v) পরিবারের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা: শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র শিক্ষকমহাশয়েরই অবদান থাকে না। পরিবারের অবদানও অনস্বীকার্য। প্রকৃত অর্থে শিক্ষক এবং পরিবারের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর বর্তমান রূপ এবং ভবিষ্যৎ জীবন নির্ধারিত হয়। এজন্য প্রয়োজন পরিবার এবং বিদ্যালয়ের মধ্যে সুষ্ঠু সংযোগ এবং সমন্বয় গড়ে তোলা। এক্ষেত্রেও মূল দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষকমহাশয়।
(vi) উপযুক্ত পরিবেশ রচনা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা সহায়ক উপযুক্ত পরিবেশ রচনার দায়ভার শিক্ষককে বহন করতে হয়। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানকালে শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য কোলাহল এবং সকল প্রতিবন্ধকতাবিহীন পরিবেশ শিক্ষককে রচনা করতে হয়। শ্রেণিকক্ষের বাইরেও সমগ্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুশৃঙ্খল পরিবেশ রচনার দায়িত্ব শিক্ষককে সুদক্ষতার সঙ্গে পালন করতে হয়।
(vii) জীবনাদর্শ গঠন: শিক্ষার্থীকে প্রকৃত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে তার মধ্যে উপযুক্ত জীবনাদর্শের বোধ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এটি হল শিক্ষকের একটি গুরুদায়িত্ব। যেহেতু শিক্ষার্থীরা বয়ঃসন্ধিকালে নিজেদের জীবনাদর্শ নির্বাচন করে, তাই শিক্ষকের উচিত তাদের সামনে মনীষী এবং মহাপুরুষদের জীবনাদর্শ তুলে ধরা। এর পাশাপাশি তিনি নিজেও একজন উপযুক্ত জীবনাদর্শের অধিকারী হবেন। অর্থাৎ শিক্ষকমহাশয়ের জীবন শিক্ষার্থীর জীবন গঠনে সমর্পিত হবে।
(ix) শিক্ষামূলক নির্দেশনাদান: আধুনিক শিক্ষকের একটি অন্যতম কাজ হল নির্দেশনা দান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকালীন বিভিন্ন প্রকার নির্দেশনা দান করা শিক্ষকের দৈনন্দিন কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষামূলক ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনাও শিক্ষকমহাশয় দিয়ে থাকেন।
               সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে বর্তমানে শিক্ষকের কাজ পূর্বের থেকে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যভাবে বলা যায় যে, পরিকল্পনা রচনা থেকে শুরু করে তার বাস্তবায়ন, এমনকি মূল্যায়ন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে শিক্ষক তাঁর দায়িত্ব এবং কর্তব্য যথাযোগ্য সম্মানের সঙ্গে সম্পাদন করেন। শিক্ষাবিদ্গণ এজন্যই শিক্ষককে শিক্ষাপ্রক্রিয়ার একটি মেরু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
6295916282; 7076398606